বিভিন্ন সুবিধা

কোথায়, কখন, আর কীভাবে কাজ করা হবে সেটা বদলে যাচ্ছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, স্বয়ংক্রিয়তা, এবং ডেটা প্রক্রিয়াকরণে যে সব উন্নতি হয়েছে সেটা ক্রমাগত দায়িত্বগুলিকে কর্মীদের থেকে ডিজিটাল সিস্টেমগুলির দিকে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, যেটা প্রত্যক্ষভাবে সংগঠিত শ্রমের ভূমিকাকে প্রভাবিত করে। যুক্তরাষ্ট্রে (ইউনাইটেড স্টেটস)-এ, ব্যুরো অফ লেবার স্ট্যাটিস্টিক্স অনুমান করছে যে “ছোটখাটো স্বল্প মেয়াদির কাজ করার কর্মীরা” 2020 নাগাদ মোট কর্মীবাহিনীর 43 শতাংশ হয়ে যাবে। যুক্তরাষ্ট্র (ইউ.এস.-এ), আনুমানিক 4 জনের মধ্যে 1 জন কোনো না কোনো ভাবে গিগ (gigs) বা ছোটখাটো স্বল্প মেয়াদি কাজ করার অর্থনীতির সাথে জড়িত। ইউনাইটেড কিংডম, ফ্র্যান্স, আর অষ্ট্রেলিয়ার মতো দেশগুলিতে, পরিষেবাদান শিল্পে ক্রমবর্ধমান সংখ্যক কর্মীরা তাদের ছোটখাটো স্বল্পমেয়াদী কাজ করার বরাত অ্যাপগুলির মাধ্যমে পেয়ে থাকে– এটা এমন এক ধরনের পরিবর্তন যার সাথে সংশ্লিষ্ট থাকে কর্মীদের অধিকার মুলতুবি থাকা, সামাজিক সুবিধাগুলি অপর্যাপ্ত হওয়া, হয়রানী বেড়ে যাওয়া, আর চালিয়ে যেতে না পারার মতো অল্প মজুরি। ভারতে, প্রায় 81% শ্রমশক্তি অসংগঠিত ক্ষেত্রে নিয়োজিত রয়েছে।


এই পরিস্থিতির একটা প্রতিক্রিয়া হিসাবে, আমরা এমন সব প্ল্যাটফর্ম সমবায় (কো-অপারেটিভ) গঠনের প্রস্তাব রাখছি যেগুলি কর্মী-নিয়ন্ত্রিত হবে। প্ল্যাটফর্ম সমবায় (কো-অপারেটিভ)গুলির সাথে সংশ্লিষ্ট কর্মীদের মালিকানা কর্মীদের সম্পদ ও ইকুইটি বাড়াতে পারে কিন্তু সবসময় কর্মীদের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে না। সন্দেহপ্রবণ ব্যক্তিরা তর্ক জুড়তে পারেন যে গতানুগতিক কর্মী সমবায় (কো-অপারেটিভ)গুলি যথেষ্ট বড়ো হওয়ার মতো হত না আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বেশিরভাগ এমপ্লয়ি স্টক ওউনারশিপ প্ল্যান (ESOP)-গুলি যথেষ্ট গণতান্ত্রিক না। সেই কারণেই এটা ঘটানোর জন্য আমাদের ইউনিয়নগুলির সহযোগিতা ও পরিকাঠামো দরকার হয়।

অনাস্থাবাদী সক্রিয়তা বেড়ে চলেছে, বহু মানুষ প্রযুক্তিগত দানবদের অবাধ ক্ষমতা দেখে দেখে বিরক্ত ও ক্লান্ত হয়ে গেছেন। আমেরিকার সেনেটার এলিজাবেথ ওয়ারেন প্রস্তাব দিয়েছেন যেন Amazon, Google, Apple, এবং Facebook-এর মতো প্রযুক্তি দানব কোম্পানী, যারা তাদের প্রতিযোগীদেরকে ভেঙে গুড়িয়ে দিয়েছে, তাদেরকে যেন ভেঙে টুকরো করে দেওয়া হয়। Deliveroo আর Uber কর্মীরা হরতাল সংগঠিত করেছেন, ফলে “ভাগাভাগি করে নেওয়ার অর্থনীতি”-র রোমান্টিক কল্প-কাহিনী ভেঙে খান খান হয়ে গিয়ে অল্প বেতন, হয়রানি, আর স্বাস্থ্য-নিরাপত্তার অভাব থাকার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা হয়েছিল।

পুরানো দিনের বুলি “ইউনিয়নের আন্দোলনের ফলে আপনি সপ্তাহান্তের ছুটি পেলেন” আর চাহিদা অনুসারে কাজ করার অর্থনীতির যুগে খাটছে না।

সংগঠিত কর্মীদের একটা শক্তিশালী নতুন বাহন দরকার যেন সেটা আরও ন্যায্য চাহিদা অনুসারে কাজ করার মতো কাজের পরিস্থিতিতে কর্মীদেরকে সংগঠিত করার পাশাপাশি ইউনিয়নের বিকাশও দ্রুততর করতে পারে। ডিজিটাল অর্থনীতির একাকীত্ব ও অন্যান্য নেতিবাচক প্রভাবগুলির নতুন ও উদ্ভাবনী উপায়ে মোকাবিলা করার জন্য, ইউনিয়নগুলি অন্যান্য ধরনের কর্মী আন্দোলনগুলির যেমন প্ল্যাটফর্ম সমবায় (কো-অপারেটিভ) আন্দোলনের মতো পরিবেশের উপর নির্ভর করে। চিরাচরিত ইউনিয়নের মডেলগুলি কর্মীদেরকে সংগঠিত করতে সমস্যায় পড়ছে যেহেতু তারা ক্রমবর্ধমান হারে গিগ বা ছোটখাটো স্বল্প মেয়াদি কাজ, প্ল্যাটফর্মসমূহ, আর স্বল্প মেয়াদী কাজের উপরে নির্ভর করছেন। এটা বিশেষত বিতরণ করে রাখা কর্মীদের জন্য সত্যি যারা একই জায়গায় থেকে কাজ করছেন না। প্ল্যাটফর্ম সমবায় (কো-অপারেটিভ)গুলি অনলাইনে কর্মীদেরকে এক নতুন উপায়ে সংগঠিত হওয়ার উপায় করে দিচ্ছে, যেখানে সদস্য-মালিকদের স্পষ্ট ধরনের অধিকার আর অগ্রাধিকার থাকে।

ভারতের সেলফ-এমপ্লয়েড ওমেনস অ্যাসোসিয়েশন, Lobster 207, যুক্তরাষ্ট্র (ইউনাইটেড স্টেটস)-এর দ্য সিনসিনাটি ইউনিয়ন কো-অপারেটিভ-এর মতো ইউনিয়ন সমবায় (কো-অপারেটিভ)গুলি আর নাইটস অফ লেবার, দ্য বাস্ক মোন্ড্রাগন কো-অপারেটিভ দ্বারা অনুপ্রাণিত অন্যান্য ইউনিয়ন সমবায় (কো-অপারেটিভ)গুলি এবং ইউনাইটেড স্টিল ওয়ার্কার্সের মতো প্রগতিশীল ইউনিয়নগুলি দেখিয়ে দিচ্ছে যে ইউনিয়নগুলি কীভাবে নিজেদেরকে জড়িত করতে পারে।

প্ল্যাটফর্ম সমবায় (কো-অপারেটিভ)গুলি ইউনিয়ন সমবায় (কো-অপারেটিভ) মডেলকে বহন করে ডিজিটাল অর্থনীতির ভিতরে ঢুকিয়ে দিতে পারেন।

উদাহরণ হিসাবে, কল্পনা করুন, একটা সমবায় (কো-অপারেটিভ) খাবার সরবরাহ করার পরিষেবার জন্য কুরিয়ারের কাজ যারা করেন তারা ইউনিয়নের মাধ্যমে সংগঠিত আছেন। তারা সমবেত ভাবে প্ল্যাটফর্মটিতে তাদের মজুরি, সুবিধাসমূহ, আর গোপনীয়তার নীতি বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন এবং মূলত অ্যালগোরিদমটাকেই পরিচালনা করা হবে যেটা তাদের প্রতিদিনকার কাজ করার কার্যকলাপকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। প্ল্যাটফর্ম সমবায় (কো-অপারেটিভ)গুলি কেবল প্রশাসন, মালিকানা, আর লাভ সংক্রান্ত বিষয় না; এগুলি কর্মীদের নিজেদের কর্মস্থলকে নিয়ন্ত্রণ করার বিষয়ও বটে।

প্ল্যাটফর্ম সমবায় (কো-অপারেটিভ)গুলি ইউনিয়নগুলিকেও তাদের অল্প বয়সী কর্মী প্রজন্মগুলির সাথেও যোগাযোগ করতে দেয় যারা অনলাইনে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপারে আরও সাবলীল।

কর্মী ও সমবায় (কো-অপারেটিভ) নেতৃবৃন্দ এটা অনুধাবন করেন যে প্ল্যাটফর্ম সমবায় (কো-অপারেটিভ)-এর পরিকাঠামো অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলির মাধ্যমে সংগঠিত হওয়ার এক কার্যকর সমাধান, পাশাপাশি সেটা কর্মীদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক সুবিধাও প্রদান করে।

ভাগাভাগি করে নেওয়া মালিকানার ব্যবস্থা, গণতান্ত্রিক প্রশাসনিক ব্যবস্থা, আর ইউনিয়নগুলির সংগঠিত করার ক্ষমতার মাধ্যমে, কর্মীরা ভবিষ্যতের কাজ করার আরও ন্যায়সঙ্গত কাঠামো গড়ে তুলতে পারেন।

Who Else Benefits from Platform Co-ops